আল্লাহ তা‘আলা নর ও নারীকে ভিন্ন-ভিন্ন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষ সৃষ্টির যে উদ্দেশ্য, তা সাধারণত নারী পুরো করতে পারে না। এবং নারী সৃষ্টির উদ্দেশ্যও পারে না পুরুষ পুরো করতে। কারণ উভয়ের শারীরিক গঠন, যোগ্যতা, কর্মক্ষমতা ও কর্মক্ষেত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
পুরুষের কর্মক্ষেত্র হলো ঘরের বাইরে। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-নকরী, শিল্প-কারিগরি, এবং সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব পরিচালনা—এসব পুরুষের দায়িত্ব।
আর নারীর ভুবন হলো তার আপন ঘর। নারী তো গৃহিণী। সাংসারিক ও ঘরোয়া কাজকর্ম, সন্তানের লালন-পালন, তাদের সার্বিক উন্নতি ও উৎকর্ষের প্রতি দৃষ্টিদান, স্বামীকে সঙ্গ ও স্বস্তি দান এবং আদর্শ পরিবার গঠনে তাকে সহযোগিতা দান—এসবই নারীর কাজ।
নারী-পুরুষের এ ইমতিয়ায ও পার্থক্য কোনো বৈষম্য নয়। এ বরং সম্পূর্ণ ফিতরী, স্বভাবজাত ও স্বাভাবিক। আর মানবসমাজ কেবল তখনই চারিত্রিক অবক্ষয় ও বিপর্যয় থেকে বেঁচে থাকতে পারে, যখন এ পার্থক্যকে মেনে নেওয়া হবে এবং ধরে রাখা হবে।
ইসলাম নারীকে পর্দার নির্দেশ এজন্যই দিয়েছে, যাতে উভয় শ্রেণির মধ্যে এ স্বাতন্ত্র ও পার্থক্য বজায় থাকে। যাতে মানবসমাজ সব ধরনের বিগাড় ও বিনাশ থেকে মুক্ত ও নিরাপদ থাকে। মূলত পর্দার বিধান সমাজ ও পরিবেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুরুষের সকল জৈবিক দুর্বলতার মোক্ষম এলাজ এ পর্দা। তাই মুসলিম মা-বোনের উচিত, এ ব্যাপারে ওজর ও আপত্তির সুর অবলম্বন না করা, বরং গৌরব ও আগ্রহের সাথে পর্দাপুসিদার ব্যাপক চর্চা ও অনুশীলন করা। যাতে বিশ্বের অপরাপর নারীগণও এর বরকত ও কল্যাণ থেকে উপকৃত হতে পারেন। এরূপ করলে অনেক সওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে- ইনশাআল্লাহ।
বস্তুত পর্দা নারীর ভূষণ ও গৌরব। ইসলাম নারীকে পর্দার বিধান দিয়ে ইজ্জত ও সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। সুতরাং অত্যন্ত প্রফুল্লচিত্তে এ বিধান মেনে চলা উচিত। এ তো একান্তভাবেই নারীর আপন গৌরবের জিনিষ।
এ পর্দা নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন- ‘কুরআন-সুন্নাহ্র আলোকে এবং বাস্তবতা ও যুক্তির নিরিখে পর্দার বিধান।’ এর প্রথম অধ্যায়ে পর্দার শরঈ বিধান সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহ্ভিত্তিক সারগর্ভ আলোচনা করা হয়েছে। পর্দার কয়টি স্তর? কোন স্তরের কী
বিধান। স্বাভাবিক অবস্থার কী বিধান। ব্যতিক্রম পরিস্থিতির কী বিধান। ব্যতিক্রম পরিস্থিতি কী? চেহারা ও মুখ খোলার কী বিধান এবং প্রচলিত বোরকা পরে হাটে-মাঠে বের হওয়ার কী বিধান—এসবই এবং এ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক বিষয় উঠে এসেছে এ অধ্যায়ে।
দ্বিতীয় অধ্যায়টি শাইখুল ইসলাম হযরত মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী ছাহেব দামাত বারাকাতুহুমের বিভিন্ন বয়ান-বক্তৃতা থেকে সংগৃহীত। এতে তিনি শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে পর্দার বিধান আলোচনা করার পাশাপাশি যুক্তি ও বাস্তবতার নিরিখে পর্দাচর্চার সুফল এবং পর্দাহীনতার কুফল সম্পর্কে অত্যন্ত বাস্তবদর্শী আলোকপাত করেছেন। ‘নারী স্বাধীনতা’র শ্লোগানের আড়ালে সমাজ, বিশ্ব ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অসাধু উদ্দেশ্যের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। সর্বোপরি পর্দাহীনতাজনিত বিশ্বব্যাপী ছেয়ে যাওয়া ভয়ঙ্কর অশ্লীলতা থেকে নারীসমাজের মুক্তি ও পরিত্রাণের কার্যকরী পথ ও পন্থা নির্দেশ করেছেন। আল্লাহপাক হযরতকে এ যুগের রাহনুমায়ীর জন্য সিহ্হাত ও আফিয়াতের সঙ্গে আরও অনেক দীর্ঘদিন জীবিত রাখুন- আমীন।
বক্ষ্যমাণ আয়োজনের প্রথম অধ্যায়ের অনুবাদ করেছেন জামি‘আ মাহমূদিয়া ইছহাকিয়া (মানিকনগর)-এর উস্তাযুল হাদীস মাওলানা আবদুস সাত্তার ছাহেব। দ্বিতীয় অধ্যায়ের অনুবাদ করেছেন বরেণ্য ফকীহ ও আলেমেদীন, প্রথিতযশা লেখক ও গবেষক হযরত মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম। প্রথম অধ্যায়ের তাহকীক, শাস্ত্রীয় গবেষণা ও সম্পাদনা করেছেন আমাদের দারুত তাসনীফের সাথী মাওলানা আবদুল্লাহ মা‘রূফ। আল্লাহ তা‘আলা সংশ্লিষ্ট সকলকে জাযায়ে খায়ের দান করুন-আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
Reviews
There are no reviews yet.